‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপনে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাত করল সাদিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাদিয়া জান্নাতকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার। তিনি বলেন, ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’। গত ১১ বছর ধরে সাদিয়া জান্নাত এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ হলেও প্রতারক সাদিয়া জান্নাতের কথাবার্তা ও স্মার্টনেস দেখে কানাডা প্রবাসী ভেবেই সবাই ভুল করতো। তার ফাঁদে পড়ে অনেকেই খুইয়েছেন কোটি টাকা।

অভিযানে সাদিয়া জান্নাতের কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।

শেখ রেজাউল হায়দার আরো জানান, এ বছরের ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়- প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি, সন্তানহীন, বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা, নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যোগাযোগের জন্য ঠিকানা- বারিধারা। এরপর একটি মোবাইল নম্বর দেয়া।

এভাবেই ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল সাদিয়া জান্নাত। সে তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করে। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।

তিনি আরো জানান, বিজ্ঞাপন দেখে মো. নাজির হোসেন প্রতারক সাদিয়া জান্নাতের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশান-১ থাই সিগনেচার রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন।

সাদিয়া জান্নাতের এসব কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে প্রতারক সাদিয়া জান্নাত জানায়, কানাডায় প্রচণ্ড শীত তাই সেখান থেকে তার দুইশ কোটি টাকা ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন।

শেখ রেজাউল হায়দার জানান, ওই টাকা ডিএইচএল এর মাধ্যমে ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে সর্বমোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে ফোন বন্ধ করে দেন।

তিনি জানান, গত ১১ বছরে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাদিয়া জান্নাত। তার একটি হিসাবের খাতা উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার হিসাব আমরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। সেখানে আমরা ১ কোটি টাকা পেয়েছি।

তিনি আরো জানান, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরে মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিত সাদিয়া জান্নাত। আমরা এই চক্রের আরো সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।